যৌন নিপীড়নের অভিযোগে লাখ টাকায় নীরব সমাধান ন্যায়বিচার হারালো ভুক্তভোগী নারী।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:


ছবি সংগৃহীত 


ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়ার রাজাগাঁও ইউনিয়নের দানোভিটা গ্রামে পশু চিকিৎসার আড়ালে নারী যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে সুবাস চন্দ্র রায় (৪০) নামের এক স্বঘোষিত পশু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটি স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ইউনিয়নের নেতাদের মধ্যস্থতায় এক লাখ আশি হাজার টাকায় ‘মীমাংসা’ করে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সুবাস চন্দ্র রায়, ২১নং ঢোলারহাট ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের মৃত শশাঙ্ক রায়ের ছেলে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পশু চিকিৎসার নামে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে নারী সদস্যদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে আসছেন। সম্প্রতি এক বাকপ্রতিবন্ধী গৃহবধূকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সুবাসকে এলাকাবাসী হাতে-নাতে ধরে ফেলে।

সম্প্রতি প্রতিবন্ধী গৃহবধূ জানান, গত কয়েকদিন পূর্বে সুবাস ডাক্তার পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের দানোভিটা গ্রামে "আব্দুর রশিদ" এর বাড়িতে আসে বকেয়া টাকা চাইতে। এসময় বাড়িতে ছিল তার বাক প্রতিবন্ধী নাতনী "রুপা" ও নাত বউ "হাসি"। বাড়িতে পুরুষ না থাকায় সেই সুযোগে সুবাস "আব্দুর রশিদ" এর বাড়িতে গিয়ে "রুপা" কে একপর্যায়ে অশালীন প্রস্তাব দেয় এবং কি গায়ে অসৎ উদ্দেশ্য হাত দেন। "রুপা" এর কোলে ছিলো তার ৬/৭ মাসের শিশু। সুবাস রুপাকে নিয়ে টানাটানি করেছে বলে "রুপা" ইশারা ইঙ্গিতে সাংবাদিক কে জানান। "রুপা" আরো বলেন আমি চিৎকার করিলে এবং জোর করে বাইরে বেড়িয়ে আসলে সুবাস পালিয়ে যায়। 

পরে বিষয়টি রুপা তার বড় ভাইয়ের বউ ভাবি "হাসি"কে জানায়। এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন "আব্দুর রশিদ" ও "হাসি"। এদিকে ২৪ জুন ২০২৫ ইং মঙ্গলবার দুপুরে দানোভিটা গ্রামের আবারো একটি গরুর চিকিৎসা দিতে এসে চিকিৎসার শেষে কৌশলে আবারও "আব্দুর রশিদ" এর বাসায় ঢুকে পড়েন। "আব্দুর রশিদ" নাত বউ "হাসি" কে দেখতে পেরে সুবাস তার নিকটে বরফ চায়। "হাসি" বরফ নেই বললে সুবাস হাসিকে জোরপূর্বক ফ্রিজ দেখাতে বলে। "হাসি" ফ্রিজ খুলতে গেলে পিছন থেকে সুবাস তাকে জোরপূর্বক চেপে ধরেন। এ সময় "হাসি" চিৎকার দিলে সুবাস তাকে ছেড়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হইলে পরদিন এলাকাবাসী কৌশলে সুবাসকে অন্য একটি বাড়িতে গরুর অসুস্থর কথা বলে ডেকে নিয়ে আসে এবং তাকে সেখানেই আটক করেন।

এই ঘটনা জানাজানি হলে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে এবং কিছু কথিত নেতার ‘সহযোগিতায়’ ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। অভিযোগ উঠেছে, এলাকাবাসীর কথা মতে এক লাখ আশি হাজার টাকায় মীমাংসার নামে ভুক্তভোগীদের চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।তবে টাকা কারা নিয়েছে সেই নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।ভুক্তভোগী ও ভিকটিমের সাথে কথা বললে জানায় "আব্দুর রশিদ" রুপা ও "হাসি" কে আইনিয় মাধ্যমে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, বিষয়টি যেহেতু সমাধান করে দিয়েছে সেহেতু আর আমরা বাড়াইতে চাই না। তাছাড়াও আমাদের এখানে থাকতে হইলে অবশ্যই সকলের সাথে মিলে মিশেই থাকতে হবে।

এলাকাবাসীর দাবি, সুবাসের বিরুদ্ধে আগেও এমন একাধিক অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই নানা প্রভাবশালীর হস্তক্ষেপে পার পেয়ে যান তিনি।

স্থানীয় রাজনীতি এবং নেতাদের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “অপরাধীকে ধরেই ফেলা হলেও অর্থের বিনিময়ে তাকে রক্ষা করা হচ্ছে। এতে নির্যাতিতাদের বিচার পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।


এ বিষয়ে অভিযুক্ত পশু ডাক্তার সুবাসকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সাজানো নাটক।তবে টাকার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।

রাজাগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, “আমি বাকপ্রতিবন্ধী নারীর বিষয়ে কিছু জানি না। তবে অন্য একটি নারীর বিষয়ে ডেকে এনে সুবাসকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। লেনদেনের অভিযোগ সঠিক নয়।”

এ বিষয়ে রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম নাজমুল কাদের জানান, “আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

সংশ্লিষ্টদের মতে, সুবাসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, এ ধরনের অপরাধ সামাজিকভাবে স্বীকৃতি পেয়ে যাবে। পশু চিকিৎসার আড়ালে যৌন হয়রানির ঘটনাটি যেনো আর কখনো মীমাংসার নামে ধামাচাপা না পড়ে এই দাবি উঠেছে সচেতন মহলে।

সুতরাং, অভিযোগগুলো লিখিত না থাকায় এবং প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ থাকায় ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এলাকাবাসী দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করছেন, আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে এই ধরনের অপরাধ বন্ধ হবে না।

এছাড়া, সরকারি অনুমোদন ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পশু চিকিৎসা সেবা চালানোর বিষয়টিও প্রশাসনের নজরদারি দাবি করছে সচেতন মহল।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন,“আমরা চাই যারা সমাজে দায়িত্বে আছেন তারা যেন দায়িত্বশীল আচরণ করেন। আর নির্যাতিতারা যেন কখনো ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়।”

এই ঘটনায় শুধু ভুক্তভোগী নারীই নয়, পুরো এলাকার সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই প্রসাশনের দৃষ্টি আকর্ষণে দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে স্থানীয় সচেতন মহলের।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.