ঠাকুরগাঁওয়ে লাখ টাকার যাত্রী ছাউনি এখন মাদকের আখড়া।

শাহাজাদ ইসলাম ডেস্ক রিপোর্ট:

ছবি একুশে ট্রিবিউন 


সরকারি প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে নির্মাণ করা যাত্রী ছাউনিগুলো এখন আর যাত্রীদের আশ্রয়স্থল নয় পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডা ও ভবঘুরেদের আশ্রয়কেন্দ্রে। 


অযত্ন, অব্যবস্থাপনা এবং পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে অধিকাংশ ছাউনিই আজ পরিত্যক্ত ও ব্যবহার অযোগ্য অবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে পড়ে আছে।


জেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকারের আওতায় ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মোট ৪৭টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে জেলা পরিষদের ১৮টি ছাউনি এবং স্থানীয় সরকার প্রকল্পের আওতায় ২৯টি ছাউনি রয়েছে। এসব ছাউনি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ যাত্রীদের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও আরামদায়ক অপেক্ষার স্থান তৈরি করা।


কিন্তু সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভাউলারহাট, আকচা  রুহিয়া,ও গড়েয়া,  অনেক এলাকায় যাত্রী ছাউনিগুলো আজ একেবারে অচল। বসার স্থানগুলো ধুলাবালিতে একাকার, অনেক ছাউনির ছাদ ও বসার জায়গা ভেঙে গেছে, এবং কোথাও কোথাও বোঝার উপায় নেই এগুলো কখনো যাত্রীদের জন্য নির্মিত হয়েছিল। বেশিরভাগ স্থানে এখন বসে থাকেন মাদকসেবী, ভবঘুরে ও ভিক্ষুকেরা।


স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন, যাত্রীদের উপকারে না এসে বরং এসব ছাউনি সমাজে নতুন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নে নির্মিত ছাউনিগুলোর অবস্থা সবচেয়ে করুণ। তাদের দাবি, এসব প্রকল্পের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ।


তিন চাকার যানবাহনের আধিপত্যে গত কয়েক বছরে আঞ্চলিক রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে এসব যাত্রী ছাউনিগুলো কার্যত অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। যাত্রীরা এখন সুবিধামতো স্থান থেকেই ইজিবাইক, অটোরিকশা বা পাগলুতে গন্তব্যে পৌঁছান, ফলে নির্দিষ্ট স্টপেজ ব্যবহারের প্রয়োজনই পড়ে না। এই সুযোগে পরিত্যক্ত ছাউনিগুলো পরিণত হয়েছে নেশাখোরদের আখড়ায়।


এ বিষয়ে স্থানীয় টেম্পু চালক সুজন ইসলাম বলেন, “নির্দিষ্ট স্টপেজ থাকলেও যাত্রীরা যেখানে খুশি উঠতে নামতে চান। তাই ছাউনির প্রয়োজনীয়তা আর আগের মতো নেই।” তিনি আরও বলেন, এই এলোমেলো যাত্রী ওঠানামায় সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।


এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন জানান, “যাত্রী ছাউনিগুলোকে পুনরায় কার্যকর ও যাত্রীবান্ধব করতে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।”


তবে স্থানীয়দের দাবি, শুধু পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়ন ও তদারকির ওপর জোর না দিলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। অন্যথায় যাত্রী ছাউনিগুলো শুধু অর্থ অপচয়ের উদাহরণ হয়েই থেকে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.