পরিচ্ছন্নতার অভিযানে জেগে উঠলো পটুয়াখালী ভার্সিটির:

ছবি একুশে ট্রিবিউন 



পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) যেন আজ ভিন্ন এক সকালে জেগে উঠেছিল—পরিচ্ছন্নতা, শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধে আলোকিত হয়ে। 


২ আগস্ট সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ‘ক্লিন ক্যাম্পাস’ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. কাজী রফিকুল ইসলাম।ক্যাম্পাসের প্রতিটি হল চত্বর যেন মুখর ছিল এক আনন্দময়, দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে। বিজয় ২৪ হল থেকে শুরু করে একে একে এম কেরামত আলী হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল-১ ও ২, তাপসী রাবেয়া বসরী ছাত্রী হল এবং কবি বেগম সুফিয়া কামাল হল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এই পরিচ্ছন্নতার মহোৎসব। দীর্ঘ দু’ঘণ্টার এই কর্মসূচি শেষ হয় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে থাকা এই মানুষটি নিজ হাতে ঝাড়ু নিয়ে নামেন হলগুলোর করিডোর, ডাইনিং স্পেস, বাথরুম ও আবাসিক কক্ষগুলোতে। তার হাতে যখন ঝাড়ুর স্পর্শে উঠতে থাকে ধুলোবালির স্তর, তখন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চোখে ভাসে সম্মানের আলো। 

 ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সম্পর্কে পবিপ্রবির ভিসি প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞানের কেন্দ্র নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের মানবিক, দায়িত্বশীল ও নৈতিকভাবে গড়ে ওঠার একটি মঞ্চ। পবিপ্রবির ছাত্রছাত্রীরা যেন পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে অন্যদের জন্য উদাহরণ হয়ে ওঠে। একজন ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নয়, একজন অভিভাবক হিসেবে আমি চাই এই ক্যাম্পাস হোক আমাদের সম্মিলিত গর্ব।”

ছাত্রদের কণ্ঠে তখন ঝরছে আবেগ আর কৃতজ্ঞতা। শহীদ জিয়াউর রহমান হল এর শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম রাতুল ও সোহেল রানা জনি এবং এম কেরামত আলী হলের শিক্ষার্থী রিমন, তানজিম ও আকাশ বলেন,“স্যারকে আমরা সবসময় শ্রদ্ধা করি, কিন্তু আজ আমাদের চোখের সামনে যখন উনি নিজের হাতে ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করলেন, তখন আমরা বুঝতে পারলাম—নেতৃত্ব কাকে বলে।”

তাপসী রাবেয়া বসরী হলের ছাত্রী তাসলিমা এবং কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী সুকন্যা বলেন, “আমরা তো শুধু শুনেছিলাম, ভাইস-চ্যান্সেলর স্যার একজন আদর্শিক মানুষ। কিন্তু আজ দেখলাম, উনি শুধু নির্দেশই দেন না, নিজেও সেই কাজ করেন। এই দৃশ্য আমাদের মনকে ছুঁয়ে গেছে।”

 কর্মসূচিতে ভিসি এর সাথে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, হল প্রভোস্টবৃন্দ, সহকারী প্রভোস্টবৃন্দ, প্রক্টর, সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, নিরাপত্তা টিমের সদস্যবৃন্দ ও কর্মচারীরা। 

সবার মধ্যে কাজ করছিল এক অপরূপ ঐক্য, এক অপার সম্মিলন—যেখানে বয়স, পদ কিংবা পরিচয়ের ভেদাভেদ ভুলে সকলে মিশে গিয়েছিলেন পরিচ্ছন্নতার এক মহা-আহ্বানে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর ড. মোঃ তরিকুল ইসলাম সজিব আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, “আমরা কেবল পাঠ্যপুস্তক দিয়ে শিক্ষার্থী গড়ি না, আদর্শ দিয়ে মানুষ গড়ি। আজকের এই কর্মসূচি সেই আদর্শিক শিক্ষার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”

পবিপ্রবিতে শুধুমাত্র ধুলোময়লাকে নয়, বরং নিরাসক্ততা, অবহেলা আর উদাসীনতাকেও ঝেঁটিয়ে বিদায় জানানো হলো। ক্যাম্পাস জুড়ে এখন পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছে এক অনন্য অনুপ্রেরণার সুবাস—যেখানে নেতৃত্ব, মানবিকতা আর দায়িত্ববোধ মিলেমিশে সৃষ্টি করেছে এক নতুন অধ্যায়।

পবিপ্রবির এই ‘ক্লিন ক্যাম্পাস’ কর্মসূচি আজ শুধু একটি দিনের কর্মসূচি নয়—এ যেন একটি আন্দোলন, এক আদর্শচর্চা। ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম যেভাবে নিজেকে মেলে ধরেছেন—তা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শক্তিশালী নৈতিক বার্তা। সত্যিই, নেতৃত্বের এমন নজির শিক্ষার্থীদের মনে গেঁথে থাকবে বহুদিন, হয়তো সারাজীবন।।জাকির হোসেন হাওলাদার সাংবাদিক দুমকি পটুয়াখালী মোবাইল নম্বর, ০১৭৩৯৪৮৮৫৭৪।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.