ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ‘ইমএক্স ম্যানপাওয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ লিমিটেড’র অধীনে আউটসোর্সিং দপ্তরি কাম প্রহরীর অস্থায়ী পদে ভুয়া নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে।
ভুয়া নিয়োগ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক রবিন্দ্রনাথ এবং তার ছেলে দেবা চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধে। রবিন্দ্র নাথ বর্তমানে আরাজি দক্ষিণ বঠিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,ভূয়া নিয়োগের মাধ্যমে ঢোলারহাট ইউনিয়নের ভূপাল চন্দ্রর ছেলে গৌরাঙ্গ চন্দ্রের কাছে ওই বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২৫/০৫/২০২০ সালে ১৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দাবী করেন শিক্ষক রবিন্দ্রনাথ। ভুক্তভোগী পরিবার গরু, ছাগল, জমি বিক্রিসহ ঋন গ্রহণ করে ৬ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। চাকরিতে যোগদানের পর বাকি টাকা প্রদান করবে এবং টাকা গ্রহণের সাক্ষী হিসেবে শিক্ষক রবিন্দ্র নাথ তার ব্যাংকের চেক বই এর পাতা এবং ৩০০ টাকা মূল্যের নন জুডিশিয়াল স্ট্যামে স্বাক্ষর করেন ওই শিক্ষক।
১ এপ্রিল ২০২১ সালে ইমএক্স ম্যানপাওয়ার রিক্রুইটিং এজেন্সি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের এক সংস্থা কর্তৃক এবং সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবে সংসদ সদস্য সিরাজগঞ্জ ৪ আসনের সাংসদ তানভীর ইমামের সীল ও স্বাক্ষর দেওয়া হয়।আবার উক্ত নিয়োগ পত্র ২৭/০৪/২০২১ তারিখে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগদান করতে বলা হয়। পরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় খোঁজ নিয়ে জানতে পারে নিয়োগ পত্রটি ভূয়া। নিয়োগ পত্র ভূয়া জানতে পেরে ভুক্তভোগী গৌরাঙ্গ চন্দ্র ও তার পিতা ভুপাল চন্দ্র প্রধান শিক্ষকের কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি বারবার সময় কালক্ষেপণ করে এবং টালবাহানা করে।
৩৮.৩১.৫০০০.২০১.১১.০১০.১৯-৪৫১ নং স্মারক দিয়ে একটি নিয়োগ পত্র পাঠানো হয় ভুক্তভোগী গৌরাঙ্গ চন্দ্র বর্মনকে যেখানে বলা হয় স্থানীয় জেলা প্রশাসক গিয়ে যোগদান করতে।
ভুক্তভোগী গৌরাঙ্গ চন্দ্র বর্মনের পিতা ভূপাল চন্দ্র বর্মন বলেন, রবিন্দ্র নাথ আমার ছেলের চাকরি নিয়ে দিবে বলে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় আমার সঙ্গে চুক্তি করে। আমি বিভিন্ন সময় গরু, ছাগল, এনজিও হতে ঋন গ্রহণসহ জমি বিক্রি করে অগ্রিম ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা তাকে দেই। পরবর্তীতে আবার ৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করি। তিনি বলেন ২০২০ সাল থেকে আমাকে হয়রানি করছেন শিক্ষক রবিন্দ্র নাথ। তিনি আরও বলেন এরপর সে একটি ভূয়া নিয়োগ পত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন এটা ডিসি স্যার হতে রিসিভ করা আর কিছু দিনের মধ্যে যোগদান করতে পারবে কিন্তু এখন যোগদান তো দুরের কথা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে শুনেছি এটা ভূয়া নিয়োগ। তিনি বলেন আমি আমার টাকার জন্য রাবিন্দ্র নাথকে বললে সে একাধিক বার সময় নিয়েছেন কিন্তু টাকা দেয় না এখন আমি টাকা ফেরতসহ রবিন্দ্র নাথ ও দেবা চন্দ্র বর্মনের শাস্তি দাবি করছি।
টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক রবিন্দ্র নাথ বলেন টাকা নিয়েছি ৬ লক্ষ ৪০ হাজার এর বেশি নয়। চাকরি হবে তবে সময় লাগবে তিনি বলেন করোনার সময় আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। আপনি কিভাবে নিয়োগ দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন
ইমএক্স ম্যানপাওয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ লিমিটেড’র নিয়োগ পত্র জেলা প্রশাসক এর মাধ্যমে যোগদান করবে চাকরি প্রার্থীরা। তিনি আরও বলেন চাকরি না করলে টাকা ফেরত পাবে তবে সময় লাগবে।
ইমএক্স ম্যানপাওয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ লিমিটেড’র কো- অর্ডিনেটর পরিচয় দানাকারী নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন আমি ব্যস্ত আছি পরে কথা বলছি বলেই ফোন কেটে দেন।
রুহিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ গুলফামুল ইসলাম মন্ডল বলেন আরাজি দক্ষিণ বঠিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিন্দ্র নাথ এবং তার ছেলে দেবা চন্দ্র বর্মনের বিরুদ্ধে চাকরির জন্য টাকা গ্রহণের বিষয় ভুপাল চন্দ্র বর্মন বাদি হয়ে আজ মঙ্গলবার অভিযোগ দায়ের করছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মুনছুর রহমান বলেন এরকম কোন নিয়োগ বিষয় আমি জানি না। যদি কেউ এভাবে বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন তাহলে এসব ভূয়া নিয়োগ। তিনি আরও বলেন ভুক্তভোগী পরিবার যদি লিখিত অভিযোগ করলে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।
❝আপনি আপনার মতামত দিন, অবশ্যই ভালো রুচিশীল মন্তব্য করুন 🙂 ধন্যবাদ ❞