একুশে ট্রিবিউন ডেস্ক রিপোর্ট
ছাত্রলীগের পদধারী অনেকেই জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন জানিয়ে সংগঠনের নেতাদেরকে ‘গণহারে’ গ্রেপ্তারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী সংগঠনটির সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সোমবার রাতে নিজের ফেইসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি এই অবস্থানের কথা জানান। ঘোষণা দেন তাদের পাশে থাকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্রলীগের পদধারী ৮০ শতাংশই এই আন্দোলনে ছিল জানিয়ে সারজিস লেখেন, “যারা সময়ের প্রয়োজনে ন্যায়ের পক্ষে ছাত্রলীগের সকল বাধা উপেক্ষা করে আমার সাথে জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছে, তারা আমার ভাই, ২৪ এর অভ্যুত্থানের যোদ্ধা ৷ আমি তাদের পক্ষে থাকব ৷”
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে নিষিদ্ধ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের মধ্যে দীর্ঘ এই মন্তব্য দেন সারজিস।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক লেখেন, “যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তারা খুব ভালো করে জানেন এখানে হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হত ৷ তাদের প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতে হত , গণরুমে থাকতে হত ৷ সেজন্য হলে যারা থাকত তাদের অধিকাংশ এক প্রকার বাধ্য হয়েই এসব করত ৷”
হলে যে ছাত্রলীগের কমিটি হত, সেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কিছু কারণে থাকত জানিয়ে উদাহরণও দেন সারজিস। যেমন, “ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়, যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়, অন্যরা যেন তার উপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয় ৷”
''হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হত অধিকাংশ এক প্রকার বাধ্য হয়েই এসব করত”,লেখেন তিনি।
নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে ছাত্রলীগের নেতাদেরকে পেলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসে।
নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে ছাত্রলীগের নেতাদেরকে পেলেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এই দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসে।
বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করত মন্তব্য করেন তিনি লেখেন, “অনেকে ভিন্ন মতের লোকদের উপর অত্যাচার করত, অনেকে ক্যান্ডিডেট হত, অনেকে একটু ‘ফাঁপর’ নিয়ে চলত।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক এই প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ওই ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী রেখেছে দাবি করে সারজিস লেখেন, “তারা যেমন পোস্টেড ছিল তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেইস ছিল ৷
“তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই অন্যান্য নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং এ কারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি ৷”
ছাত্রলীগের পদধারী ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে অন্যরাও বের হয়ে আসার ‘সাহস করতে পারত না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ওই গাটস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলাই শো করতে পারে ৷
“হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিল বলেই ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিল এবং আন্দোলনটাকে প্রাথমিকভাবে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ১ থেকে ১৫ জুলাই হলের পদধারী ছাত্রলীগ নেতারা সক্রিয়ভাবে আন্দোলন করায় অন্য ছেলেরাও এগিয়ে আসতে পেরেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ১ থেকে ১৫ জুলাই হলের পদধারী ছাত্রলীগ নেতারা সক্রিয়ভাবে আন্দোলন করায় অন্য ছেলেরাও এগিয়ে আসতে পেরেছেন।
১৫ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন না আসলে ৫ আগস্ট কখনও সম্ভব হত কিনা সে বিষয়েও ‘ঢের সন্দেহ আছে’ বলেও উল্লেখ করেন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
তিনি লেখেন, “এখন প্রশ্ন হচ্ছে হলের এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ‘ছাত্রলীগ ট্যাগ’ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলব কি না? “পরে নিজেই জবাব দিয়ে লেখেন, “ফেলব না৷”
আন্দোলন সফল না হলে ছাত্রলীগে ‘এই ছেলেগুলোকেই’ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হত মত দিয়ে সারজিস লেখেন, “বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হত৷”
তবে ‘এই’ ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ অন্যায়ে জড়িত থাকলে তাদের শাস্তির পক্ষে সারজিস।
“কিন্তু যখন দরকার ছিল তখন রাজপথে নামালাম আর এখন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পোস্টেড দেখেই গণহারে গ্রেপ্তার হবে, এটা কখনই সমর্থন করি না, এটা হতে পারে না ৷”
❝আপনি আপনার মতামত দিন, অবশ্যই ভালো রুচিশীল মন্তব্য করুন 🙂 ধন্যবাদ ❞