ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
![]() |
ছবি একুশে ট্রিবিউন |
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উত্তর বঠিনা কলোনীপাড়া রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলমান কর্মকাণ্ডকে আর শুধু অনিয়ম বললে সত্যের অবমূল্যায়ন হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন আজ এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা, প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ জব্বার নামের এক ব্যক্তি, যিনি বাস্তবে শিক্ষক পরিচয়ের আড়ালে একক কর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠানের সর্বনাশ ঘটিয়ে চলেছেন।
এই ব্যক্তি বছরের পর বছর নিজে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও সহকর্মী শিক্ষকদের ন্যায্য ছুটি অনুমোদন না করে অনুপস্থিত দেখিয়ে দমনমূলক আচরণ করে চলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, কোনো প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই তিনি সহকারী শিক্ষকদের বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন (এসিআর)-এ স্বাক্ষর করে থাকেন। একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ক্ষমতার অপব্যবহার যে কতখানি ভয়াবহ পরিণতির দিকে ধাবিত করতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
তবে এখানেই সীমা টানার সুযোগ নেই। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৫ জন ভুয়া শিক্ষার্থীর নামে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে সেই অর্থ নিজের আত্মীয়স্বজনের মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন। ভুয়া তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ শুধু গুরুতর প্রশাসনিক অনিয়ম নয়—এটি স্পষ্টতই ফৌজদারি অপরাধের আওতাভুক্ত। অথচ এসব তথ্যে অবহিত থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ATO) যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু ‘সতর্ক করে’ দায়িত্ব শেষ করেছেন—যা প্রশাসনিক দুর্বলতা নয়, বরং এক ধরনের আত্মসমর্পণ।
উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বরাদ্দকৃত অর্থও এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছেন বলে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। একইসাথে অভিযোগ রয়েছে, তিনি পুরো শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ২০ দিন বিদ্যালয়ে ক্লাস করেই মাসিক বেতনসহ অন্যান্য ভাতা নিয়মিত গ্রহণ করেছেন। এই ধরনের দৃষ্টান্ত একজন শিক্ষক নয়—প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের কারিগরের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
যখন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে উপবৃত্তি পাচ্ছে অথচ সেখানে শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই, তখন তা শুধু অর্থ আত্মসাৎ নয়—একটি প্রজন্মের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার নগ্ন চিত্র। বিষয়টি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ এবং নৈতিকভাবে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষা প্রশাসনের যথাযথ সংস্থাসমূহের দায়িত্ব হচ্ছে—উক্ত বিদ্যালয়ে শিগগিরই তদন্ত পরিচালনা করে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একইসাথে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির নিষ্ক্রিয়তা, দায়িত্বহীনতা এবং তাদের ভূমিকার প্রকৃত পর্যালোচনা করা।
একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা ক্ষমতার দখলদারিত্ব ও অর্থ লোপাটের এই চিত্র দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক ভয়াবহ বার্তা। সময় এসেছে, যেখানে শিক্ষার নামে প্রতারণা চলবে—সেখানেই শুদ্ধিকরণের পদক্ষেপ শুরু করতে হবে। নইলে এই ধারাবাহিকতা গোটা ব্যবস্থাকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলবে।
❝আপনি আপনার মতামত দিন, অবশ্যই ভালো রুচিশীল মন্তব্য করুন 🙂 ধন্যবাদ ❞