মিডিয়া ও প্রশাসনের বিক্রিগণতন্ত্রের ছদ্মবেশে অন্যায়ের উৎসব
লেখক: [শাহাজাদ ইসলাম একুশে ট্রিবিউন প্রকাক ও সম্পাদক]
![]() |
ছবি একুশে ট্রিবিউন |
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের সবার মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের কাছে কি অর্থের বিনিময়ে মিডিয়া ও প্রশাসন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে? এই প্রশ্নটি এখন আর কেবল সাধারণ জনতার আড্ডার বিষয় নয়; এটি পরিণত হয়েছে জাতীয় আত্মসমালোচনার কেন্দ্রীয় ইস্যুতে।
মিডিয়া এবং প্রশাসন এই দুটি স্তম্ভের ভূমিকা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে অপরিহার্য। মিডিয়ার কাজ সত্যকে তুলে ধরা, প্রশাসনের কাজ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু যখন এই দুটি প্রতিষ্ঠানই ক্ষমতার কাছে মাথা নত করে, তখন সত্য চাপা পড়ে, অন্যায় উৎসাহ পায় এবং বিচার হয়ে পড়ে পক্ষপাতদুষ্ট।
ধামাচাপা দেওয়ার যন্ত্রে পরিণত মিডিয়া
আজ আমরা দেখছি, অনেক মিডিয়া হাউস সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে। বিজ্ঞাপন, লাইসেন্স, টিআরপি, এমনকি কর ছাড়ের বিনিময়ে অনেকেই সত্যের বদলে ‘সরকারি ভাষ্য’ প্রচার করছে। কোনো দুর্নীতির ঘটনা যদি ক্ষমতাসীন দলের কোনো সদস্যের সঙ্গে জড়িত থাকে, তা হলে সেই খবর যেন অদৃশ্য হয়ে যায়। সাংবাদিকতা যেখানে প্রশ্ন তোলার কাজ, সেখানে এখন তা অনেক ক্ষেত্রে ‘প্রশংসা তোলার’ মাধ্যম হয়ে উঠছে।
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ
অন্যদিকে প্রশাসনও অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে নিজের স্বাধীনতা হারাচ্ছে। একটি নিরীহ মানুষ যদি অন্যায়ের শিকার হয়, তবে তার বিচার পাওয়া আজ দুঃসাধ্য। কারণ বিচার ব্যবস্থাও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ছায়ায় রঙিন হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও, সেগুলো বছর পর বছর ঝুলে থাকে। আর দুর্বল ও অসহায় মানুষ ছোটখাটো অপরাধে দ্রুত সাজা পায়।
এর ফলাফল কী?
এর ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ:
-
দুর্নীতি দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
-
সাধারণ মানুষের রাষ্ট্রের ওপর আস্থা কমে যাচ্ছে।
-
সত্য ও ন্যায়বিচার কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ।
-
অন্যায়কারীরা উৎসাহ পাচ্ছে, কারণ তারা জানে, টাকায় সবকিছু কেনা যায় এমনকি বিবেকও।
পরিবর্তন দরকার
আমরা যদি সত্যিকারের গণতন্ত্র চাই, তবে আমাদের দরকার:
-
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া
-
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন
-
তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
-
সক্রিয় নাগরিক সমাজ ও জবাবদিহির সংস্কৃতি
শেষ কথা
ক্ষমতার লোভ ও টাকার গন্ধে যদি মিডিয়া ও প্রশাসন নিজেদের আত্মা বিক্রি করে দেয়, তবে সেটা কেবল একটি সরকারের পতন নয়—এটি একটি দেশের নৈতিক পতন। আর সেই ধ্বংসের ভার আমরা কেউই বহন করতে পারব না।
❝আপনি আপনার মতামত দিন, অবশ্যই ভালো রুচিশীল মন্তব্য করুন 🙂 ধন্যবাদ ❞