ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে আকচা ইউনিয়নের পূর্ব আকচা গ্রামের নৈসর্গিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে এই জাদুঘর।
পূর্ব আক্চা (ঠাকুরগাঁও) থেকে ফিরে: কৃষক, কামার, জেলে, তাঁতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা ছিলেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যপূর্ণ উত্তরের জনপদের মূল চালিকাশক্তি। তাদের কাজ-কর্ম, জীবন-যাপন, বিনোদন ও লোকজ ঐতিহ্যের মহিমায় উজ্জ্বল এ অঞ্চল।
এসব মেহনতি মানুষের শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলা জীবন-যাপনের যুদ্ধ, উপকরণ ও বৈচিত্র্য ফুটে উঠেছে ঠাকুরগাঁও শহরতলীর পূর্ব আক্চা গ্রামে অবস্থিত ‘লোকায়ন’ জীবনবৈচিত্র্য জাদুঘরে।
এ জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে। তৃণমূল লোকজ গ্যালারি দিয়ে এ জাদুঘরের যাত্রা শুরু হলেও পরে আরও তিনটি গ্যালারি সংযোজন করা হয়।
ভবিষ্যতে আরও ৮টি গ্যালারি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে এ জাদুঘরের গ্যালারিগুলো হলো-তৃণমূল লোকজ গ্যালারি, সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গ্যালারি, নদী গ্যালারি, এবং মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি।
জাদুঘর ঘুরে দেখা গেল, প্রত্যেকটা গ্যালারিই আলাদা আলাদা বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে সাজানো। শ্রমজীবী মানুষের জীবন জীবিকা, হাসি-কান্না ও বিনোদনের বিচিত্র উপকরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘তৃণমূল লোকজ গ্যালারি’।
এখানে প্রদর্শিত উপকরণের মধ্যে রয়েছে কৃষিজ উপকরণ, ভেষজ চিকিৎসা উপকরণ, বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা, কাগজি নোট, অলংকার, গৃহস্থালী উপকরণ, বৈবাহিক উপকরণ ও মৃৎশিল্প।
লোকায়ন জীবন বৈচিত্র্য জাদুঘরের বাদ্যযন্ত্র
বাংলাদেশের প্রায় সবক’টি নদ-নদীর পানি সংরক্ষিত আছে ‘নদী গ্যালারি’তে। গ্যালারিটি ২০১৬ সালে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এখানে রয়েছে সম্প্রতি হারিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি নদীর পানি। এখানে আরও রয়েছে আরব সাগর, নীল সাগর, বঙ্গোপসাগরের পানি।
নদীর পানি ছাড়াও এ গ্যালারি রয়েছে নদীভিত্তিক বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের নানান উপকরণ, বাংলাদেশের নদ-নদীর তালিকা, বিভিন্ন ধরনের নৌকা, নদীভিত্তিক উৎসব, মৎস্য, জলজ উদ্ভিদসহ অরোও অনেক বিষয়।
বাংলাদেশের উত্তর জনপদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন-যাপন, সংস্কৃতি, বাসস্থান, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, পেশা, উৎসব ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের বিভিন্ন উপকরণে সমৃদ্ধ ‘সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গ্যালারি’। নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের শিল্পকলা, ধর্ম, পেশা, খাদ্যাভ্যাস ও জীবন-যাপন সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও প্রদর্শিত হয়েছে এ গ্যালারিতে।
পূজার ঘণ্টা
২০১৭ সালে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ‘মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি’। এখানে প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আলোকচিত্র ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ প্রদর্শন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ, রণাঙ্গনের ইতিহাস এবং দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমির মাটি।
জাদুঘরের ব্যাপারে কথা হয় উদ্যোক্তা ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, খেটে খাওয়া মানুষগুলোর রক্ত-ঘামে প্রতিষ্ঠিত আজকের এ সভ্যতা। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শিকড় নতুন প্রজন্মকে জানানোর প্রয়াসেই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা।
জানা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে এ জাদুঘর। শিক্ষার্থীদের স্টাডি ট্যুর সম্পূর্ণ ফ্রি এবং অন্যান্য দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য-২০ টাকামুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিতে ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের অর্জন সমূহের বিভিন্ন ইতিহাস, আলোকচিত্র, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ ইত্যাদি প্রদর্শন করা হয়েছে। এখানে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ, রণাঙ্গনের ইতিহাস এবং ছোট ছোট বোতলে দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমির মাটি।
এছাড়া এ গ্যালারির দোতলায় একটি আধুনিক মিলনায়তন, মুক্ত মঞ্চ ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সমৃদ্ধ অডিও-ভিজ্যুয়াল গ্রন্থাগার এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র নিয়মিত প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশেষত নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনাই মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি মূল লক্ষ্য।
লোকায়ন জীবন বৈচিত্র্য জাদুঘরের উদ্যোগে প্রতিবছর জৈষ্ঠ্য মাসে ফল উৎসব, বর্ষার বরষা মঙ্গল উৎসব, মঙ্গা মোকাবেলায় আশ্বিন মাসে মঙ্গা কাল, অগ্রহায়ণে নবান্ন উৎসব, মাঘ মাসে পিঠা উৎসব এবং চৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত হয় ৩ দিনব্যাপী লোকজ মেলা ও কবিগানের উৎসবলোকজ সংস্কৃতি ও শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকা ও সংগ্রামে ব্যবহৃত বৈচিত্র্য সব উপকরণভিত্তিক এই জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে। তৃণমূল লোকজ গ্যালারি দিয়ে এই জাদুঘরের যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তিতে আরো তিনটি গ্যালারি সংযোজন করা হয়। বর্তমানে এই জাদুঘরের গ্যালারি সমূহ হলো তৃণমূল লোকজ গ্যালারি, সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গ্যালারি, নদী গ্যালারি, এবং মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি।বাংলাদেশে নদীমাতৃক দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবন জীবিকায় ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে নদী ও তার পানি। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা ও মানুষের অসচেতনতায় হারিয়ে গেছে অনেক নদী। বাংলাদেশের ২০০ টি নদীর পানি এই গ্যালারিতে সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে বর্তমানে বহমান নদীর পানি, তেমনি রয়েছে সম্প্রতি হারিয়ে যাওয়া নদীর পানি। এখানে আরো রয়েছে আরব সাগর, নীল সাগর, বঙ্গোপসাগরের পানি।
নদীর পানি ছাড়াও এই গ্যালারি রয়েছে নদীভিত্তিক বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের নানান উপকরণ, বাংলাদেশের নদ-নদীর তালিকা, বিভিন্ন ধরনের নৌকা, নদীভিত্তিক উৎসব, মৎস্য, জলজ উদ্ভিদ ইত্যাদি সম্পর্কিত নানা তথ্য।
❝আপনি আপনার মতামত দিন, অবশ্যই ভালো রুচিশীল মন্তব্য করুন 🙂 ধন্যবাদ ❞