কক্সবাজার প্রতিনিধি:
![]() |
বিডিসি টেলিভিশন |
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডে ২ হাজার শেল্টার পুড়ে গেছে। এতে করে অন্তত ১২ হাজার লোক গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
রোববার (০৫ মার্চ) দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।এতে ভয়াবহ আগুনে ২০০০ ঘরবাড়ি পুড়ল।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন ম্যানেজার এমদাদুল হক জানান, ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিটের ৩ ঘণ্টা চেষ্টা করে বিকেল পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ এপিবিএন পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ জানান, ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। যা অল্প সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এ ও বি ব্লকে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সিপিপি সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।
এপিবিএন অফিসার আরো জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার সরবরাহ করতে বিভিন্ন দাতা সংস্থা এগিয়ে এসেছে।
কক্সবাজারস্থ অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানিয়েছেন, প্রাথমিক অবস্থায় ২ হাজারের মত ঘর পুড়েছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১২ হাজার রোহিঙ্গা। পুড়ে যাওয়ার মধ্যে ৩৫ টি মসজিদ-মক্তব, ২ টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, হেল্প পোষ্ট একটি, যুব কেন্দ্র ১ টি, নারী বান্ধব কেন্দ্র ১ টি, শিক্ষা কেন্দ্র ১ টি, শিশু বান্ধব কেন্দ্র ১ টি, মানসিক পরিচার্যা কেন্দ্র ১ টি পুড়ে গেছে। এপর্যন্ত হতাহতের কোন তথ্যও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আলী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অগ্নিকাণ্ডে ৩৫ টি মসজিদ ও মক্তব সহ এনজিও সংস্থা পরিচালিত অসংখ্য লার্নিং সেন্টার, শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র , নারীবান্ধব কেন্দ্র ও তথ্য সেবা কেন্দ্র পুড়ে যায়। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। আগুনের খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা ইমামুদ্দিন ও তোফাইল আহমদ জানান, ‘আগুনে সব পুড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদের মত অসংখ্য পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইন চার্জ (সিনিয়র সহকারী সচিব) সরওয়ার কামাল জানান, ‘প্রায় ৩ ঘন্টা পর ক্যাম্পের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির কাজ শুরু করছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি- ২হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। কীভাবে আগুনের ঘটনা ঘটছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড খবর পেয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান, ৮ এপিবিএন পুলিশের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর, সহ-অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) খন্দকার ফজলে রাব্বী ও জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রথমে রাতের খাবার সহ আশ্রয়ের বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। হতাহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের সবধরণের সহযোগিতা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে তাদেরকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। আর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত নাশকতা কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন ১ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে প্রথমে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। পরবর্তীতে আটককে জিজ্ঞাসাবাদ এবং গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে বাকি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ দিকে আগে গত বছরের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীতে আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছেন ১৫ জন রোহিঙ্গা। তখন ১০ হাজারের মতো রোহিঙ্গার ঘর পুড়ে যায়। একই বছরের ২ জানুয়ারি উখিয়ার বালুখালী ২০ নম্বর ক্যাম্পে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত করোনা হাসপাতালে আগুন লাগে। এতে কেউ হতাহত না হলেও হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারের ১৬টি কেবিন পুড়ে যায়। এরপর একই বছরের ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়ার শফিউল্লাহ কাটা নামে একটি শরণার্থী শিবিরে এক অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৬০০ ঘর পুড়ে গিয়েছিল।
❝আপনি আপনার মতামত দিন, অবশ্যই ভালো রুচিশীল মন্তব্য করুন 🙂 ধন্যবাদ ❞