আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে বাঙালির ঐতিহ্যের প্রতীক ‘শিধ কেটে চুরি’

শাহাজাদ ইসলাম ডেস্ক রিপোর্ট 


ছবি একুশে ট্রিবিউন 


কালের পরিবর্তনে বদলে গেছে জীবনযাত্রা, হারিয়ে গেছে গ্রামীণ বাংলার অনেক চেনা চিত্র। তেমনি এক ঐতিহ্যের নাম "শিধ কেটে চুরি"— যা এক সময় ছিল গ্রামের মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম, আবার কোনো কোনো সময় রসে ভরা গল্পের উপাদান। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর মাটির ঘরের অবলুপ্তির ফলে সেই চুরির কৌশল হারিয়ে যেতে বসেছে। এতে জিবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প পদ্ধতি বেছে নিয়েছে এই পেশার সাথে জড়িত কারিগররা।


এক সময় মাটির দেয়ালে কাঠের দরজায় বসানো হতো ‘শিধ’। সেটি ছিল দড়ি বা কাঠের তৈরি গোঁজ, যা ভিতর থেকে টেনে বন্ধ করা হতো। চোরেরা রাতের আঁধারে নিঃশব্দে সেই শিধ কেটে ঘরে ঢুকে চুরি করত। তবে বর্তমানে গ্রামাঞ্চলেও অধিকাংশ ঘরই পাকা হওয়ায় এবং আধুনিক লক ব্যবহারে ‘শিধ’ ব্যবস্থার প্রয়োগ আর নেই। ফলে এই ঐতিহ্যবাহী চুরির কৌশলও হারিয়ে গেছে সময়ের স্রোতে।


তবে এখানেই শেষ নয়, চিত্র এখন আরও ভয়াবহ।  

সাবেক "শিধ কাটা কারিগররা (ওরফে চোর)" আজ আর ঘরের দরজায় নয়, সংসদ, ক্ষমতায়,আর প্রশাসনের অন্দরে বসে কলমের ডগায় করছে চুরি। আগের মতো রাতের আঁধারে ধরা পড়ার ভয় নেই, সম্মানহানির আশঙ্কাও নেই। বরং ক্ষমতার ছায়ায় তারা রীতিমতো নিরাপদ। দূর্নীতি, ঘুষ আর অনিয়মের মাধ্যমে তারা লুটছে জনগণের টাকা‌ যা ‘শিধ কাটা চুরি’র চেয়েও ধ্বংসাত্মক।


বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন, আগে চোরদের লজ্জা ছিল, ধরা পড়লে সমাজচ্যুত হতো। এখন যারা লুটপাট করছে, তাদের লজ্জা তো দূরের কথা, বরং তারা সমাজে গর্বের সাথে ঘুরে বেড়ায়।

এই রূপান্তর শুধু চুরির কৌশলে নয়, নৈতিকতার পরিবর্তনেও। শিধ কাটা চুরি হারানো শুধু একটি ঐতিহ্যের মৃত্যু নয়, বরং এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি যেখানে চুরি এখন কলমের খোঁচায়, আইন আর ব্যবস্থার ভেতরে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.